ব্যাংকে গেলে ঠিকভাবে সেবা দেয় না – গ্রাহকসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন | Poor Customer Service in Banks – Why Does It Happen?

ব্যাংকে গেলে ঠিকভাবে সেবা দেয় না – গ্রাহকসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন | Poor Customer Service in Banks – Why Does It Happen?


বাংলাদেশে অনেক গ্রাহকই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে অসন্তোষজনক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। অভিযোগ রয়েছে, অনেক কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় তথ্য বা সহায়তা যথাযথভাবে প্রদান করেন না, কেউ কেউ দুর্ব্যবহার করেন বা এমন আচরণ করেন যা গ্রাহকের কাছে অবমাননাকর মনে হয়। অনেক সময় একটি ডেস্কে গেলে দায়িত্ব অন্য ডেস্কের ওপর ঠেলে দেওয়া হয়—ফলে গ্রাহক ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, কিন্তু সমস্যার সমাধান মেলে না। কর্মকর্তারা সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করেন বা দায়িত্ব নিতে চান না, যা পেশাদার আচরণের ঘাটতির পরিচায়ক। এ ধরনের অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র গ্রাহকের হতাশা বাড়ায় না, বরং পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেবার মান নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর উচিত গ্রাহকসেবার প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

সমস্যার মূল কারণগুলো কী?

বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকে গ্রাহকসেবার মান নিম্ন থাকার পেছনে কয়েকটি বাস্তব কারণ রয়েছে। প্রথমত, জনবল ঘাটতির কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর কাজের চাপ অত্যধিক, যার ফলে তারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন এবং আচরণে বিরূপতা দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমার সার্ভিস সংক্রান্ত প্রফেশনাল ট্রেনিং যথাযথভাবে দেওয়া হয় না, ফলে কর্মকর্তারা জানেন না কীভাবে সংকটময় পরিস্থিতিতে দক্ষভাবে ও ভদ্রভাবে সাড়া দিতে হয়। তৃতীয়ত, কিছু কর্মকর্তার মধ্যে একটি নেতিবাচক মনোভাব কাজ করে—তারা মনে করেন, গ্রাহক মানেই সমস্যা তৈরি করে, আর এই মনোভাব আচরণে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। চতুর্থত, ব্যাংকের অনেক প্রক্রিয়া এতটাই জটিল ও কাগজপত্রনির্ভর যে কর্মকর্তারাও বিরক্ত হয়ে পড়েন, আর সেই বিরক্তি গিয়ে পড়ে গ্রাহকের ওপর। এই সব কারণ মিলিয়ে অনেক সময় একটি সাধারণ সেবা গ্রহণ করাও গ্রাহকের জন্য দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

এজাতীয় সমস্যা বিদ্যমান থাকলে এবং ব্যাংকে গ্রাহকসেবার দুর্বলতার ফলে অনেক সময় গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য ব্যাংকে চলে যান, সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক রিভিউ দেন এবং ব্যাংকের ব্র্যান্ড ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। প্রথমত, কর্মকর্তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাদের পারফরম্যান্স মনিটর করা প্রয়োজন, যাতে তারা আরও পেশাদার এবং ধৈর্যশীল হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি ব্রাঞ্চে একটি হেল্প ডেস্ক ও কাস্টমার রিলেশন অফিসার থাকা উচিত, যারা শুধুমাত্র গ্রাহকসেবায় নিয়োজিত থাকবেন। তৃতীয়ত, গ্রাহকের মতামত সংগ্রহ এবং তার ফলোআপ নেওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য সার্ভে ও ফিডব্যাক সিস্টেম চালু রাখতে হবে। চতুর্থত, একটি স্বচ্ছ ও নিরাপদ অভিযোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে গ্রাহক নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন এবং দ্রুত সমাধানও পান। এসব উদ্যোগ ব্যাংকের গ্রাহকসেবা মানোন্নয়নে সহায়ক হতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রতি গ্রাহকের আস্থা পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবে।

তাই, ব্যাংকিং শুধুই আর্থিক লেনদেন নয়, এটি বিশ্বাসের সম্পর্ক। যদি একটি ব্যাংকে গ্রাহক সম্মান ও সমানভাবে সেবা না পান, তবে সেই প্রতিষ্ঠান তার ভবিষ্যৎ হারাতে বসেছে। ভালো আচরণ শুধু মানবিক দিক থেকেই নয়, ব্যবসায়িক দিক থেকেও লাভজনক।

নবীনতর পূর্বতন