মিনিমাম চার্জের ফাঁদে কেন গ্রাহক আটকে থাকবে? | Why Should Customers Be Trapped by Minimum Charges?

মিনিমাম চার্জের ফাঁদে কেন গ্রাহক আটকে থাকবে? | Why Should Customers Be Trapped by Minimum Charges?


বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সেবা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট এবং ফিনটেক উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা এখন সহজেই বিল পরিশোধ, অর্থ স্থানান্তর এবং কেনাকাটাসহ বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে পারছি। ভবিষ্যতের লক্ষ্য আরও ক্যাশলেস এবং স্টেবল ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা। তবে এই স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন একটি গ্রাহকবান্ধব এবং উদার ব্যাংকিং নীতি।

একটি কার্যকর ব্যাংকিং নীতির ক্ষেত্রে দুইপক্ষেরই স্বার্থ সংরক্ষিত হওয়া জরুরি। একদিকে যেন গ্রাহকরা অতিরিক্ত এবং অযৌক্তিক চার্জের শিকার না হন, অন্যদিকে ব্যাংকও তাদের টেকসই মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। কারণ, ব্যাংক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এবং তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লাভজনক হওয়া অপরিহার্য। তাই একটি টু-ওয়ে ব্যাংকিং নীতির মাধ্যমে গ্রাহক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই ভবিষ্যতের সঠিক দিশা।

ডিজিটাল লেনদেনে অতিরিক্ত মিনিমাম চার্জ: গ্রাহক ভোগান্তির নতুন চেহারা

ডিজিটাল লেনদেন এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, কিছু অতিরিক্ত মিনিমাম চার্জ আমাদের অভিজ্ঞতাকে নেতিবাচক করে তুলছে। অধিকাংশ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট একটি মিনিমাম সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করেছে, যা ছোট আকারের লেনদেন বা ন্যানো ট্রানজেকশনে গ্রাহকদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করে।

উদাহরণস্বরূপ, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম থেকে নগদ অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সাধারণত ২% থেকে ৩.৫% চার্জ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু একইসঙ্গে ব্যাংকগুলো একটি মিনিমাম চার্জ নির্ধারণ করে — যা সাধারণত ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এর ফলে, আপনি যদি একটি কম পরিমাণের টাকা উত্তোলন করেন, তাহলে তুলনামূলক বেশি ফি দিতে হতে পারে। কারণ ব্যাংক তখন সেই মিনিমাম চার্জ প্রয়োগ করে, যা শতাংশ হারে হিসাব করলে অনেক বেশি হয়ে দাঁড়ায়।

ঠিক একই ধারা দেখা যায় অনলাইন ফান্ড ট্রান্সফার, কার্ড-চেকের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর ইত্যাদি সেবাতেও। ফলে ক্ষুদ্র গ্রাহক বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত ব্যবহারকারীদের জন্য ডিজিটাল লেনদেন একটি ব্যয়বহুল অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট 

বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের ফিনান্সিয়াল চাহিদাগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট ও নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ক্ষুদ্র সঞ্চয়, দৈনন্দিন খরচের জন্য স্বল্প পরিমাণের নগদ উত্তোলন, সীমিত পরিমাণের বিল পরিশোধ এবং মাইক্রো লেনদেনের চাহিদা এখন মানুষের জীবনের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটলেও, অধিকাংশ ব্যবহারকারীর লেনদেনের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। তাই একটি কার্যকর আর্থিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে, এই ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা ব্যাঙ্কিং সেবা, ফি কাঠামো ও নীতিমালা তৈরি করা জরুরি, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলবে।

সমাধান এবং উত্তরণের উপায়:

# মিনিমাম চার্জের পরিবর্তে শুধুমাত্র শতাংশ ভিত্তিক ফি নির্ধারণ

# ক্ষুদ্র লেনদেনের জন্য বিশেষ ডিসকাউন্ট বা অফার চালু করা

# ন্যানো এবং মাইক্রো ট্রানজেকশনের সুবিধার্থে লো-কস্ট ফি মডেল তৈরি করা

ভবিষ্যতের ব্যাংকিং নীতি কেমন হওয়া উচিত?

ভবিষ্যতে ব্যাংকিং নীতিগুলো হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং গ্রাহককেন্দ্রিক। ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম যখন দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, তখন নীতিমালার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন জরুরি। একটি আদর্শ ব্যাংকিং নীতি হওয়া উচিত যেখানে 

গ্রাহকদের স্বার্থ সর্বাগ্রে বিবেচনা করা হবে: বিশেষ করে ক্ষুদ্র লেনদেন বা নিম্ন-আয়ের গ্রাহকদের জন্য স্বল্প খরচের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা।

স্বচ্ছ ফি কাঠামো থাকবে: যাতে গ্রাহকরা পূর্বেই বুঝতে পারেন কোন সেবার জন্য কত টাকা দিতে হবে।

ব্যাংকের লাভজনকতা বজায় থাকবে: সঠিকভাবে ফি নির্ধারণ করে ব্যাংকের সার্ভিস কোয়ালিটি বজায় রাখা হবে।

ইনোভেশন এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির উপর জোর দিতে হবে হবে: যেমন, মোবাইল ব্যাংকিং, ওপেন ব্যাংকিং সিস্টেম, এবং ফিনটেক পার্টনারশিপের মাধ্যমে নতুন সেবা চালু করা।

এক কথায়, ভবিষ্যতের ব্যাংকিং নীতি এমন হতে হবে যেখানে "ব্যবসায়িক লাভ" এবং "গ্রাহক স্বার্থ" একসঙ্গে এগিয়ে চলে। এটাই হবে একটি টেকসই এবং ক্যাশলেস অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের মূল ভিত্তি।


এস এম শামীম হাসান 
ব্র্যান্ড কনটেন্ট ম্যানেজার 
ব্যাংকিং আইকিউ ডট ইনফো

নবীনতর পূর্বতন