ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা নিয়ে প্রতারণা | How to Identify Digital Financial Scams?

ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা নিয়ে প্রতারণা | How to Identify Digital Financial Scams?


ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা নিয়ে প্রতারণা – কীভাবে বুঝবেন?বর্তমানে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা (DFS) যেমন মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন পেমেন্ট, ই-ওয়ালেট, ক্রেডিট কার্ড সার্ভিস ইত্যাদি দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি প্রতারণার ঘটনাও বাড়ছে। সচেতন না হলে সহজেই আপনি প্রতারণার শিকার হতে পারেন। চলুন জেনে নিই কীভাবে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল প্রতারণা চিহ্নিত করবেন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন।

সম্প্রতি আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে নানা ধরনের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল প্রতারণার ঘটনা সম্পর্কে শুনছি, যা আমাদের অনেকের মধ্যে ভীতি ও উদ্বেগ তৈরি করেছে। আসুন, আমরা সচেতন হই এবং এসব প্রতারণার প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানি।

ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল প্রতারণার সাধারণ লক্ষণ

১। অপ্রত্যাশিত পুরস্কারের ঘোষণা: কোনো লটারিতে অংশ না নিয়েও যদি পুরস্কার জেতার মেসেজ পান, সতর্ক হোন।

২। তথ্য চাওয়া অনুরোধ: আপনার ওটিপি (OTP), পিন (PIN), বা ব্যক্তিগত তথ্য চাইলে বুঝে নিন এটি প্রতারণা।

৩। ভুয়া কল সেন্টার বা ব্যাংক প্রতিনিধির পরিচয়: প্রতারকরা নিজেকে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করে তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।

৪। ভুয়া অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার: অফিসিয়াল লোগো ব্যবহার করে তৈরি করা ভুয়া অ্যাপস ও ওয়েবসাইটে লগইন করলে আপনার তথ্য চুরি হতে পারে।

৫। অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থ স্থানান্তর অনুরোধ।

৬। ক্রেডিট কার্ড অথবা লোন অফার: লোন অথবা ক্রেডিট কার্ডের অফার দিয়ে ফোনকলে অথবা ইমেইলে কোন তথ্য দেওয়া হলে তা অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।

ছোট্ট একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি, একদিন হঠাৎ করে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার ফোনে কল আসে। ওপাশে ভদ্র কণ্ঠে এক ব্যক্তি নিজেকে আসাদুজ্জামান নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি গাজীপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে কথা বলছেন। তিনি জানান, আমার সন্তানের জন্য সরকারিভাবে ১০,২০০ টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ হয়েছে, এবং এই অর্থ পেতে হলে আমাকে একটি ডেবিট কার্ডের তথ্য দিতে হবে।

আমি মূলত একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর, তাই প্রায়ই বাস্তব অভিজ্ঞতা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হয়। সেই সুবাদে, আমি একটি পুরনো অ্যাকাউন্টের ডেবিট কার্ড নাম্বার, মেয়াদ, এমনকি সিভিভি কোড পর্যন্ত তার সঙ্গে শেয়ার করি—পুরোটাই একটি কনটেন্ট এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে।

তবে এখানেই শেষ নয়। কিছুক্ষণ পর সে ব্যক্তি বলেন, ব্যাংক থেকে একটি মেসেজ আসবে যেখানে চার সংখ্যার একটি কোড থাকবে—মানে, ওটিপি (OTP)। তিনি সেটা আমার কাছ থেকে জানতে চান।

আমি মেসেজটি পড়ে দেখি, সেটি আসলে একটি লেনদেনের অনুমোদন কোড—যার মাধ্যমে ওই ব্যক্তি আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ঠিক ১০,২০০ টাকা তুলতে পারবে। অর্থাৎ, যেই পরিমাণ টাকার কথা বলে আমাকে প্রলুব্ধ করেছে, সেই টাকাটাই সে আমার থেকেই নিতে চাচ্ছে।

সতর্ক থাকায় আমি ওই মুহূর্তে ওটিপি শেয়ার করিনি এবং সরাসরি কলটি কেটে দিই। পরবর্তীতে দ্রুত আমার ব্যাংকে বিষয়টি জানাই এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

এই ঘটনার থেকে যেসব শিক্ষা নেওয়া জরুরি:

১। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক কখনো ফোনে ব্যক্তিগত কার্ড তথ্য বা ওটিপি চায় না।

২। প্রলোভনে পড়ে কার্ড নাম্বার, সিভিভি বা ওটিপি শেয়ার করবেন না।

৩। আপনার সন্তান, প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তার নাম করে কেউ ফোন করলে, যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না।

৪। যদি কোনো তথ্য শেয়ার করেও ফেলেন, তাহলে দ্রুত ব্যাংকে যোগাযোগ করুন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিন।

আমি এই অভিজ্ঞতাটি কনটেন্ট তৈরির উদ্দেশ্যে নিয়েছিলাম, কিন্তু আপনি বা অন্য কেউ যেন কখনও এই প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন, সেই আশাই করি। সচেতন হোন, সুরক্ষিত থাকুন।

এস এম শামীম হাসান 
ব্র্যান্ড কনটেন্ট ম্যানেজার 
ব্যাংকিং আইকিউ ডট ইনফো

নবীনতর পূর্বতন