প্রথমবার আন্তর্জাতিক পেমেন্ট করতে গিয়ে অনেকের মধ্যেই কিছু ভুল ধারণা বা অপূর্ণ তথ্য থেকে যায়। আমাদের একজন সম্মানিত পাঠক সম্প্রতি আমাদের ফেসবুক পেজে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন—“আমি একটি ব্যাংক থেকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সংগ্রহ করেছি, কিন্তু তাও বিদেশি মুদ্রায় পেমেন্ট করতে পারছি না।”
এই সমস্যাটি সত্যিই বাস্তব ও অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে। পরবর্তীতে আমরা তাকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করি এবং বুঝিয়ে দিই—শুধু ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট, ক্রেডিট কিংবা প্রিপেইড কার্ড থাকা যথেষ্ট নয়। ওই কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন চালু করার জন্য অবশ্যই বার্ষিক ট্রাভেল কোটার আওতায় এনডোর্সমেন্ট (endorsement) বা অনুমোদন নিতে হয়।
এই বিষয়টি অনেকেই জানেন না, বিশেষ করে যারা প্রথমবার আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে যাচ্ছেন। তাই আজকের আলোচনায় আমরা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবো—ডুয়েল কারেন্সি কার্ড থাকলেও কেন তা দিয়ে সরাসরি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট করা যায় না, এবং কীভাবে সঠিকভাবে endorsement করে বৈদেশিক লেনদেন সক্রিয় করতে হয়।
বার্ষিক ট্রাভেল কোটা কি?
Annual Travel Quota বা বার্ষিক ট্রাভেল কোটা বলতে বোঝায়—একজন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী নাগরিক একটি ক্যালেন্ডার বছরে সর্বোচ্চ কত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন ডলার) ব্যক্তিগত ভ্রমণ, কেনাকাটা, অনলাইন সাবস্ক্রিপশন কিংবা অন্য বৈধ উদ্দেশ্যে ব্যয় করতে পারবেন তার সীমা। বর্তমানে এই সীমা ১২,০০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ অন্য মুদ্রায় নির্ধারিত রয়েছে।
ট্রাভেল কোটা কাদের জন্য প্রযোজ্য?
এই কোটাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের ব্যক্তিগত পাসপোর্টধারী নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য, এবং একাধিক ব্যাংক বা কার্ড ব্যবহার করলেও বা একাধিকবার ভ্রমণ করলেও, এক বছরের মধ্যে এই নির্ধারিত কোটার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করা আইনত নিষিদ্ধ।
কোথায় কোথায় এই কোটার ব্যবহার হয়?
আন্তর্জাতিক ভ্রমণে: বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং, বিদেশি দোকান বা রেস্টুরেন্টে পেমেন্ট।
অনলাইন ট্রানজেকশনে: বিদেশি ওয়েবসাইটে সাবস্ক্রিপশন ফি (যেমন Netflix, Canva, ChatGPT), অনলাইন কোর্স বা পণ্য ক্রয়।
কার্ড লেনদেনে: আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারযোগ্য ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন।
নগদ ডলার (Cash Endorsement): আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় হাতে বহনের জন্য অনুমোদিত নগদ ডলার নেওয়া।
এনডোর্সমেন্ট (Endorsement) কেন গুরুত্বপূর্ণ?
যখনই আপনি নগদ ডলার কিনবেন বা আন্তর্জাতিক লেনদেন চালু করবেন, তখন পাসপোর্টে সেই লেনদেনের পরিমাণ এনডোর্সমেন্ট করতে হবে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নীতির অংশ এবং এর মাধ্যমে মোট ব্যবহারিত কোটার হিসাব সংরক্ষিত হয়।
ট্রাভেল কোটা সম্পর্কিতগুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
- বার্ষিক কোটার সীমা ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর।
- একাধিক ব্যাংক বা কার্ড থাকলেও মিলিয়ে মোট ব্যবহৃত পরিমাণ ১২,০০০ USD-এর বেশি হওয়া যাবে না।
- কোটার পরিমাণ সাবালক (১৮+) ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। নাবালক ও শিশুদের জন্য ভিন্ন নীতি প্রযোজ্য হতে পারে।
- ট্রাভেল কোটা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, ব্যবসায়িক বা শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে নয় (সেগুলোর জন্য আলাদা কোটা ও প্রক্রিয়া রয়েছে)।
কোটার সীমা অতিক্রম করলে কী হবে?
কোনো ব্যক্তি যদি বার্ষিক নির্ধারিত কোটার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করেন, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের শামিল। এর ফলে ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কার্ড বাতিল হতে পারে বা আর্থিক জরিমানার সম্মুখীন হতে পারেন।
ট্রাভেল কোটা সম্পর্কে পরামর্শ ও করণীয়
- আপনার ট্রাভেল বা অনলাইন খরচের হিসাব সংরক্ষণ করুন।
- প্রয়োজনে ব্যাংকের Authorised Dealer (AD) শাখার মাধ্যমে তথ্য যাচাই করুন।
- পরিবারের একাধিক সদস্য থাকলে আলাদা করে কোটার সুবিধা নিন, তবে সঠিক তথ্য ও অনুমোদন নিশ্চিত করুন।
- আন্তর্জাতিক কার্ড ব্যবহারের আগে তা “অনলাইন ও আন্তর্জাতিক ট্রানজেকশনের” জন্য এক্টিভেট করিয়ে নিন।
সুতরাং, বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক ট্রাভেল কোটা ব্যবস্থাটি একটি দায়িত্বশীল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার অংশ। যথাযথ অনুমোদন, সঠিক হিসাব ও সীমার মধ্যে থেকে লেনদেন করলে আপনি নির্ভারভাবে ভ্রমণ ও আন্তর্জাতিক কেনাকাটা উপভোগ করতে পারবেন।