বর্তমানে ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তাঁদের কাছে এমন সব প্রশ্ন করা হয় যেগুলো ব্যক্তিগত, সংবেদনশীল ও প্রাসঙ্গিক নয়। এতে কেউ কেউ মনে করেন, এটি তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন।
কেন অতিরিক্ত প্রশ্ন করা হয়?
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংককে গ্রাহক চেনার জন্য KYC (Know Your Customer) ফরম পূরণ করতে হয়। এর মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি টেরর ফাইন্যান্সিং ও মানি লন্ডারিং রোধ করা হয়।
ব্যাংকের গ্রাহক কি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য? – একটি স্পষ্ট বিশ্লেষণ
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের কাছ থেকে শুধুমাত্র সেই তথ্যগুলোই চাইতে পারেন, যা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পণ্য বা সেবার জন্য প্রয়োজনীয় এবং তাঁর দায়িত্বের পরিধির মধ্যে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো গ্রাহক একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান, তাহলে ব্যাংক কর্মকর্তা অবশ্যই তাঁর ব্যবসার আয়-ব্যয়, আর্থিক স্বচ্ছতা, বৈধতা ও সক্ষমতা যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং তথ্য চাইতে পারেন। এটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কিন্তু যদি কোনো গ্রাহক শুধু একটি হিসাব (যেমন: কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) খোলার জন্য ব্যাংকে যান, তাহলে কর্মকর্তার এই প্রোডাক্টের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় নথি এবং ব্যবসার বৈধতা যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত কিছু ডকুমেন্ট চাওয়াটাই যথেষ্ট। এই অবস্থায় ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেন, লাভ-ক্ষতির হিসাব, কিংবা অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
দুঃখজনকভাবে, অনেক সময় কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা বা শাখা ব্যবস্থাপক প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বসেন যা অত্যন্ত বিব্রতকর। এসব প্রশ্ন একজন গ্রাহকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পণ্যের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সম্পর্কহীন। এমন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দিতে একজন গ্রাহক বাধ্য নন। এসব প্রশ্ন সব সময় প্রয়োজনীয় না হলেও, কেউ কেউ এগুলো কাস্টমার প্রোফাইলিংয়ের অংশ হিসেবে ব্যবহার করেন, যা গ্রাহকের দৃষ্টিতে অপ্রিয় ও অনধিকার চর্চা মনে হতে পারে।
গোপনীয়তা নিয়ে করণীয়:
- আপনি জানতে পারেন, প্রশ্নটি কেন করা হচ্ছে।
- অপ্রাসঙ্গিক মনে হলে আপনি বলার অধিকার রাখেন যে, এটি আপনার গোপনীয়তার মধ্যে পড়ে।
- প্রয়োজনে ব্যাংকের গ্রিভ্যান্স বা অভিযোগ বিভাগে অভিযোগ জানাতে পারেন।
- আপনার সম্মতি ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক তথ্য চাওয়া হলে আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোন অভিযোগ জানানোর জন্য এখানে ক্লিক করুন.…
সুতরাং, স্পষ্ট করে বললে, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা শুধুমাত্র সেই তথ্যই চাইতে পারেন, যা তিনি দায়িত্ব অনুযায়ী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রোডাক্টের নিয়মনীতি অনুযায়ী জানতে অধিকারী। একজন গ্রাহক হিসেবে আপনি সেই প্রাসঙ্গিক তথ্য ও নথিপত্র দিতে বাধ্য থাকলেও, আপনার ব্যক্তিগত জীবন ও মতাদর্শের বিষয়ে জবাবদিহি করার প্রয়োজন নেই। ব্যাংকিং নিরাপত্তার জন্য কিছু তথ্য সংগ্রহ জরুরি, তবে তা হতে হবে প্রাসঙ্গিক, সম্মানজনক এবং স্বচ্ছ নিয়মে। গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষা না করে ব্যাংকিংয়ে আস্থা অর্জন সম্ভব নয়।