কাস্টমার কেয়ারে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা | Prolonged Wait Times in Customer Service

কাস্টমার কেয়ারে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা | Prolonged Wait Times in Customer Service


আপনি হয়তো জরুরি কোনো সমস্যায় পড়েছেন। একটি ট্রানজেকশন ঝুলে আছে বা কার্ড হারিয়ে গেছে বা ব্লক হয়েছে কিংবা হারানো কার্ড অথবা চেক বইয়ের পাতা অতি দ্রুত বন্ধ অথবা স্টপ ইন্সট্রাকশন দিতে হবে। তাড়াহুড়ো করে কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলেন, কিন্ত থেকে শুনছেন, “আপনার কলটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ... দয়া করে লাইনে থাকুন...” এই কথাগুলো ঘুরে ফিরে শুনতে শুনতে ১০, ১৫, এমনকি ৩০ মিনিটও পেরিয়ে যাচ্ছে! একসময় দেখা করলে আপনার মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ, কিন্তু প্রশ্ন এখনো শুরুই হলো না, এটা কি ন্যায্য?

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার গুলোতে কেন দীর্ঘক্ষণ ওয়েটিং এ থাকতে হয়?

এর পেছনে রয়েছে কিছু বাস্তব কারণ:

বাংলাদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাস্টমার সার্ভিসের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্রাহকের অতিরিক্ত চাপ, পর্যাপ্ত সংখ্যক এজেন্টের অভাব এবং জটিল অটোমেটেড সিস্টেম। বিশেষ করে মাসের শুরু, বিলিং সিজন বা বিশেষ অফারের সময় বিভিন্ন ব্যাংক, মোবাইল ফিনটেক ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে কলের চাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট থাকায় দীর্ঘসময় লাইনে অপেক্ষা করতে হয় গ্রাহকদের। এর সঙ্গে যুক্ত হয় অটো IVR সিস্টেমের জটিলতা—অনেক সময় সিস্টেম সঠিকভাবে রিডাইরেক্ট করে না বা কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে গ্রাহককে বারবার চেষ্টা করতে হয়। ফলে পুরো অভিজ্ঞতাটি হয় ভোগান্তিমূলক ও সময়সাপেক্ষ।

গ্রাহকের অধিকার – অপেক্ষার সীমা থাকা উচিত

একজন গ্রাহক যখন তার টাকা, সেবা বা তথ্যসংক্রান্ত কোনো সমস্যায় পড়েন, তখন তার দ্রুত ও সরাসরি সমাধান পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে অপেক্ষা করানো কখনোই পেশাদার আচরণ নয়; বরং এটি গ্রাহকের মূল্যবান সময়ের অপমান এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। তদুপরি, আইভিআর সিস্টেমের অপ্রয়োজনীয় প্রি-রেকর্ড করা বিজ্ঞাপন ও সতর্কবার্তা গ্রাহকের অর্থে চালিত হলেও, সেগুলোতে তার মূল্যবান সময় ও অর্থ নষ্ট হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কাস্টমার কেয়ারে সার্ভিস বিরম্বোনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয়

গ্রাহকসেবা উন্নয়নে কয়েকটি কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। প্রথমত, উচ্চ চাহিদার সময়ে অতিরিক্ত কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট নিয়োগ করে চাপ মোকাবিলা করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, লাইভ চ্যাট, ই-মেইল ও WhatsApp সাপোর্ট চালু রাখলে বিকল্প যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়, যা কল সেন্টারের উপর চাপ কমায়। তৃতীয়ত, ওয়ান-টাচ কাস্টমার সার্ভিস চালু করে অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকেই তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। চতুর্থত, গ্রাহক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে নিয়মিতভাবে সিস্টেম আপডেট ও সমন্বয় করলে অপেক্ষার সময় কমানো সম্ভব। এছাড়া, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও পোর্টালের মাধ্যমে এমন সব সেবা চালু করা উচিত, যাতে গ্রাহক নিজের প্রয়োজনীয় কাজ নিজেই করতে পারেন এবং কল সেন্টারে কল করার প্রয়োজন না হয়। এবং প্রয়োজনে গ্রাহকদের যে সমস্যাগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এ আই) টেকনোলজি দ্বারা সেবা দেওয়া সম্ভব তা বাস্তবায়ন করা।

গ্রাহক হিসেবে আপনি কী করতে পারেন?

যদি জরুরি প্রয়োজনেও কল সেন্টারে বারবার কল দিয়েও সাড়া না পাওয়া যায়, তবে কিছু বিকল্প উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রথমত, চেষ্টা করুন অফ-পিক সময়ে—যেমন সকাল ১০টার আগে বা রাত ৯টার পর কল করতে, যখন কলের চাপ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এরপরও যদি সাড়া না মেলে, তাহলে ই-মেইল, ফেসবুক পেইজ বা এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সমস্যাটি রিপোর্ট করুন, কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান এই মাধ্যমগুলোতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেয়। তবু যদি কোনো সমাধান না পাওয়া যায় এবং বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তবে গ্রাহক হিসেবে আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর অধিকার রাখেন।

সুতরাং, গ্রাহক সেবা মানেই শুধু সমস্যা শোনা নয়, দ্রুত সমাধান দেওয়া। অপেক্ষার যন্ত্রণা কমাতে হলে কোম্পানিগুলোকে প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ—দুটোতেই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।


এস এম শামীম হাসান 
ব্র্যান্ড কনটেন্ট ম্যানেজার 
ব্যাংকিং আইকিউ ডট ইনফো


নবীনতর পূর্বতন