ছোট শহরে বা গ্রামে ব্যাংকিং সেবা কেন দুর্বল? | Why Is Banking Service Poor in Rural or Small Town Areas?

ছোট শহরে বা গ্রামে ব্যাংকিং সেবা কেন দুর্বল? | Why Is Banking Service Poor in Rural or Small Town Areas?


বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ গ্রাম ও ছোট শহরের মানুষের ওপর নির্ভরশীল হলেও, সেই এলাকার ব্যাংকিং সেবা এখনো শহরের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বর্তমানে, বাংলাদেশে মোট ৬১টি তফসিলভুক্ত ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ব্যাংককে প্রধানত চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়: রাষ্ট্রায়ত্ত (সরকারি) ব্যাংক ৬টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৩টি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৪৩টি এবং বিদেশি ব্যাংক ৯টি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক রয়েছে ১০টি।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা এবং অর্থনীতির সাইজ অনুযায়ী ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হলেও এ শাখা এবং কার্যক্রম গুলো অধিকাংশই শহরকেন্দ্রিক। গ্রামীন পর্যায়ে বা প্রান্তিক পর্যায়ে কিছু রাষ্ট্র ব্যাংকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও তা যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে সরকারি ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল ব্যাংকিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার তুলনামূলক কম ।

এক কথায় বর্তমানে আমাদের ব্যাংকগুলো হয়ে গিয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং বড় বড় জেলা শহরকেন্দ্রিক। আমরা এখন এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তর পর্যালোচনা করার চেষ্টা করব যে কেন গ্রাম এবং ছোট শহরগুলো ডিজিটাল ব্যাংকিং সার্ভিস গুলো থেকে বঞ্চিত?

অবকাঠামোগত সমস্যা

গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং ভালো মানের রাস্তা-পথের অভাব আছে। ফলে ব্যাংকের ডিজিটাল কার্যক্রম চালানো বা নতুন শাখা খোলা কঠিন হয়ে পড়ে। এক কারণ বিদ্যুৎ ইন্টারনেট এবং ভালো যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকলে কখনোই ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সার্ভিস গুলো উপভোগ্য হবে না।

লোকবল ও দক্ষতার ঘাটতি

প্রশিক্ষিত ব্যাংক কর্মকর্তারা সাধারণত শহরে পোস্টিং চান। ফলে গ্রামে পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল পাওয়া কঠিন হয়, যা সেবার মানে প্রভাব ফেলে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি

গ্রামে বা প্রান্তিক অঞ্চল গুলোতে চুরি, ডাকাতির ঝুঁকি বেশি থাকায় এবং তুলনামূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থা কম থাকায় ব্যাংকগুলো সেখানে নতুন শাখা খোলায় অনাগ্রহ দেখায়। যার ফলে ব্যাংকগুলো এখানে ব্রাঞ্চ স্থাপন, এটিএম বুথ স্থাপন করতে আগ্রহী হয়না। 

ব্যবসায়িক লাভজনকতা কম

গ্রামে অনেক মানুষের আর্থিক লেনদেন সীমিত। ফলে ব্যাংকের জন্য ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়া কঠিন হয়। কারণ গ্রামে উৎপাদিত ফসল গুলো সাধারণত বিক্রি হয় শহরে বা বড় পূর্ণ অঞ্চলে যার ফলে লেনদেনগুলো ওই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যার ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে কোন শাখা বা উপ শাখা থাকলেও সেখানে লেনদেনের উপস্থিতি কম হতে পারে, ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে, এই ভেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাম পর্যায়ে ব্যবসা করতে আগ্রহী নন।

আর্থিক সচেতনতার অভাব

গ্রামের অনেক মানুষ এখনো ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব, লোন, সঞ্চয়, অনলাইন লেনদেন, আর ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি সম্পর্কে যথাযথভাবে জানেন না, যা সেবা গ্রহণে বাধা তৈরি করে।

ডিজিটাল আর্থিক সেবার চাহিদা

গ্রামের মানুষ এখনো হাটে বাজারে কেনাবেচা করতেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। যার ফলে এখানে তেমন কোনো সুপার শপ কিংবা রিটাইল চেইনশপ এর উপস্থিতি একেবারেই কম এ ছাড়াই পস ভিত্তিক লেনদেনের জন্য আর তেমন কোন মার্চেন্টের উপস্থিতিও গ্রাম অঞ্চল গুলোতে দেখা যায় না। 

উল্লিখিত সমস্যাগুলোর সম্ভাব্য সমাধান:

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী একেবারে গ্রামীণ পর্যায়ে এখনই ডিজিটাল ব্যাংকিং এর প্রচলন ও শহরের মতো বড় পরিসরে শুরু করা সম্ভব নয়। তবে আমরা ধীরে ধীরে আগাতে পারি। প্রাথমিকভাবে মানুষকে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে আগ্রহী করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা নিচে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি যেগুলো মাধ্যমে দিয়ে আমরা আপাতত গ্রামে বা প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস গুলো আপাতত সবাই উপভোগ করতে পারব:

  • মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিস্তার
  • ডিজিটাল ফিনটেক সেবার উন্নয়ন
  • স্থানীয় পর্যায়ে আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি
  • স্থানীয় পর্যায়ে ই-কমার্স ভিত্তিক ব্যবসার প্রসার।
  • ধাপে ধাপে ব্যাংকগুলো শাখা/এটিএম স্থাপনে আগ্রহী হয় এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা।
  • সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে ব্যাংকিং অবকাঠামো গড়ে তোলা

সুতরাং, গ্রাম ও ছোট শহরের উন্নয়নের জন্য ব্যাংকিং সেবা বিস্তার অপরিহার্য। তাই শুধু ব্যাংক নয়, সমাজ ও সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগেই সম্ভব এই সমস্যা সমাধান করা।

এস এম শামীম হাসান 
ব্র্যান্ড কনটেন্ট ম্যানেজার 
ব্যাংকিং আইকিউ ডট ইনফো 

নবীনতর পূর্বতন