বর্তমানে ব্যাংক, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এবং ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন গ্রাহক টানতে বিশাল পরিমাণ অফার দিয়ে থাকে—বোনাস, ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক, এমনকি প্রথমবার ফ্রি সার্ভিস। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যে গ্রাহকরা ঐ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রেখেছে, তাদের জন্য এমন সুযোগ বা সেবা খুব একটা দেখা যায় না। এই প্রবণতা অনেক পুরনো গ্রাহকের মধ্যে হতাশা তৈরি করে।
পুরাতন গ্রাহকদের প্রতি কেন এমন বৈষম্য হয়?
বাজার প্রতিযোগিতা নতুন গ্রাহক আকর্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করে। মার্কেট শেয়ার বাড়াতে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচুর বিনিয়োগ করে নতুনদের জন্য, যেটা অনেক সময় বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য বরাদ্দ কমিয়ে দেয়।
বিদ্যমান গ্রাহকদের অতুলনামূলক কম গুরুত্ব দেওয়ায় কী সমস্যা তৈরি হচ্ছে?
যদি পুরনো গ্রাহকদের প্রতি যথাযথ যত্ন ও গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তাহলে তাদের মনে অবহেলার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। এর ফলে ব্র্যান্ড লয়ালটি নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেকেই বিকল্প সেবা বা প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক রিভিউ বা রেটিং বেড়ে যায়, যা সামগ্রিক ব্র্যান্ড ইমেজ ও বিশ্বাসযোগ্যতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনে রাখা উচিত—আজকের যিনি একজন বিদ্যমান গ্রাহক, সেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট হলে তিনি সহজেই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নতুন গ্রাহকে পরিণত হতে পারেন। নতুন প্রতিষ্ঠানে যদি প্রাথমিকভাবে তিনি তুলনামূলকভাবে আরও ভালো ও মনোযোগী সেবা পান, তবে তার সেই দিকেই ঝুঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। তাই গ্রাহক ধরে রাখার কৌশল হিসেবে বিদ্যমান গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমাধান কী হতে পারে?
গ্রাহক ধরে রাখার কৌশল হিসেবে লয়ালটি রিওয়ার্ড প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে, যেখানে পুরনো গ্রাহকদের জন্য পয়েন্ট, ইনসেনটিভ বা বিশেষ অফার দেওয়া হয়। ব্যবহারকারীর পূর্ববর্তী লেনদেন বিশ্লেষণ করে পার্সোনালাইজড বা টেইলরড প্রোমোশন দেওয়া হলে তারা আরও বেশি আগ্রহী হন। নিয়মিত ফিডব্যাক ও ফলোআপের মাধ্যমে গ্রাহকের মতামত জানা ও তার ভিত্তিতে সেবা উন্নত করা যায়। এছাড়া এক্সক্লুসিভ এক্সপেরিয়েন্সের অংশ হিসেবে পুরনো গ্রাহকদের জন্য প্রিভিলেজ বা প্রায়োরিটি সার্ভিস চালু করাও একটি কার্যকর কৌশল।
এছাড়া ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সাথে রিলেশনশিপ এর সময়কাল ভেদে বিশেষ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করতে পারে। যেমন যারা ১০/১২/১৫/২০/২৫ বছর যে যাবত এই ব্যক্তির সাথে ব্যাংকিং করছে এদেরকে একটি বিশেষ সম্মান/ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া যেতে পারে।
গ্রাহকদের লেনদেন এবং রিলেশনশিপ সময়কাল অনুযায়ী বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেওয়া যেতে পারে যেমন সিলভার, গোল্ড, প্লাটিনাম, টাইটেনিয়াম, সিগনেচার ইত্যাদি। যা গ্রাহকদের সংক্ষিপ্ত ব্যাংকের সাথে ফিন্যান্সিয়াল রিলেশনশিপ আরো স্থায়িত্ব করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
মাসিক, কোয়ার্টার ভিত্তিক, অর্ধ বার্ষিকী কিংবা বাৎসরিক ভিত্তিতে বিভিন্ন সেগমেন্টে গ্রাহকদেরকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে যেমন, সর্বোচ্চ লেনদেনকারি, সর্বোচ্চ পজ ব্যবহারকারী, সবচেয়ে একটিভ গ্রাহক ইত্যাদি বিভিন্ন সেগমেন্টে। যাক গ্রাহকদেরকে আরো উৎসাহ বাড়াবে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণে।
ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত প্রয়োজনীয় প্রবীণ এবং সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ডেডিকেটেড সার্ভিস ডেক্স চালু করা , যাতে করে তারা স্বাচ্ছন্দ সেবা নিতে পারে।
সুতরাং, নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘস্থায়ী সফলতার জন্য পুরনোদের সম্মান ও পুরস্কার দেওয়া জরুরি। না হলে, একসময় সেই ‘নতুন’ গ্রাহকও পুরনো হয়ে অবহেলার শিকার হবে।