CIB বা ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো রিপোর্ট বাংলাদেশের প্রতিটি ঋণগ্রহীতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি। এটি আপনার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আপনার ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের ইতিহাস তুলে ধরে। অনেক সময় দেখা যায়, আপনি সময়মতো ব্যাংক লোন পরিশোধ করলেও CIB রিপোর্টে ভুল তথ্য উঠে এসেছে, যেমন– বকেয়া (overdue) দেখানো, মিসড পেমেন্ট বা ডিফল্টারের মতো স্ট্যাটাস। এটি ভবিষ্যতে নতুন লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সিআইবি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন .......
কেন এই সমস্যা হয়?
যদি ব্যাংকে আপনার লোন অথবা ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট সবকিছু যথা সময়ে পরিশোধিত হয়ে থাকে এবং তা যদি আপনার স্টেটমেন্ট এ লিপিবদ্ধ থাকে, তারপরেও যদি সিআইবি তে কোন নেগেটিভ রিপোর্ট দেখায় তাহলে সে দায়ভার গ্রাহকের নয় সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অফিসিয়াল এর মানবিক ত্রুটি অথবা ভুল তথ্য বা রিপোর্ট পেরণের ফলাফল, সমস্যাটি অবশ্যই জটিল তবে সমাধানযোগ্য। আজকে আমরা এই পুরো আলোচনা জুড়ে এই বিষয়টিকে নিয়ে কথা বলব।
কেন সঠিক সময়ে ঋণ অথবা ক্রেডিট কার্ডের ইন্সটলমেন্ট পরিশোধ করার পরেও সিআইবি তে নেগেটিভ রিপোর্ট আসে?
CIB রিপোর্টে ভুল তথ্য থাকার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন, অনেক সময় কিছু ব্যাংক বা নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) সময়মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রয়োজনীয় রিপোর্ট জমা দেয় না, যার ফলে আপডেটেড তথ্য রিপোর্টে প্রতিফলিত হয় না। এছাড়া রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় মানবিক ত্রুটির কারণে তথ্য ইনপুটে ভুল হতে পারে। আবার প্রযুক্তিগত সমস্যা, যেমন সফটওয়্যার বা সার্ভার গড়মিলের কারণেও ভুল তথ্য জমা পড়ে, যা পরে CIB রিপোর্টে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
একটি বিষয় অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, CIB রিপোর্টে ভুল তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় দায়ী থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। তথ্য হালনাগাদে অবহেলা, সময়মতো রিপোর্ট না পাঠানো কিংবা সঠিকভাবে যাচাই না করার কারণে এই ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার পর অনেক সময়ই কিছু কর্মকর্তা দায় স্বীকার না করে বিভিন্ন ব্যাখ্যা বা অজুহাত প্রদর্শনের চেষ্টা করেন, যা মূলত দায়ভার হালকা করার প্রবণতার অংশ। কিন্তু এর ফলাফলভোগ করতে হয় গ্রাহককে, যার সময়, সুনাম ও ভবিষ্যৎ আর্থিক সুবিধা ঝুঁকির মুখে পড়ে।
যেসব গ্রাহক লোন অথবা ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট ঠিকঠাকমতো করার পরেও সিআবি তে নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে তাদের এখন করণীয় কি?
CIB রিপোর্টে ভুল তথ্য দেখা গেলে প্রথমেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আবেদন করে নিজের রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। এরপর রিপোর্টে কোথায় ভুল রয়েছে—যেমন ঋণের পরিমাণ, বকেয়া অর্থ বা পরিশোধের তারিখ—তা নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করে নোট করে রাখতে হবে। ভুল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রিলেশনশিপ ম্যানেজার বা কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে লিখিত অভিযোগ দাখিল করুন এবং প্রমাণ হিসেবে লোন পরিশোধের রসিদ বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট যুক্ত করুন। যদি ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করে বা সাড়া না দেয়, তাহলে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং মুদ্রানীতি বিভাগে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে।
ভবিষ্যতে এ জাতীয় সমস্যা এড়ানোর জন্য করণীয়
CIB রিপোর্টে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে হলে কয়েকটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সর্বপ্রথম, নিয়মিত আপনার CIB রিপোর্ট চেক করুন, বিশেষ করে কোনো নতুন লোন নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে। লোন পরিশোধের পর তার রেকর্ড লিখিতভাবে সংরক্ষণ করুন এবং ব্যাংকের যেকোনো অফিসিয়াল যোগাযোগ, চিঠিপত্র বা ইমেইল লিখিত আকারে রেখে দিন। এছাড়া, যেকোনো লোন বা ক্রেডিট কার্ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার পর অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (NOC) সংগ্রহ করে রাখতে হবে, যা ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ভুল তথ্য সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
সুতরাং, সময়মতো লোন পরিশোধ করেও CIB রিপোর্টে ভুল থাকাটা হতাশাজনক হলেও এটি সমাধানযোগ্য। সচেতনতা, সঠিক পদক্ষেপ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আপনি আপনার ক্রেডিট প্রোফাইল ঠিক রাখতে পারেন, যা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ফিনান্সিয়াল সুবিধা পাওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।