ব্যাংকে টোকেন সিস্টেম থাকলেও ভেতরে বিশৃঙ্খলা কেন? | Why is There Chaos Inside Banks Despite Token Systems?

ব্যাংকে টোকেন সিস্টেম থাকলেও ভেতরে বিশৃঙ্খলা কেন? | Why is There Chaos Inside Banks Despite Token Systems?


ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সুশৃংখলভাবে সার্ভিস দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রাহকদেরকে রাখার জন্য টোকেন সিস্টেমে কিউতে রেখে সেবা দেওয়ার রীতি চালু করেছে দেশের বেশ কিছু ব্যাংক, যেমন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক ইত্যাদি। ব্যাংকগুলোতে টোকেন সিস্টেম চালুর উদ্দেশ্য ছিল—সুশৃঙ্খলভাবে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক শাখায় টোকেন নেওয়ার পরও গ্রাহকরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেন, এবং লাইনের পরিবর্তে ভেতরে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। কেন এমনটা হয়?

একজন গ্রাহক হিসেবে আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী, আমি মিরপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থেকে এ ধরনের অভিজ্ঞতা পেয়েছি, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টকেও একটি নোট আকার জানিয়েছিলাম। তবে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ মতে , টোকেন সিস্টেম চালু থাকার সত্বেও গ্রাহক সঠিকভাবে সেবা না পাওয়ার যে চিত্রটা, আমি সামান্য বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম।

টোকেন ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত অবকাঠামো অপরিহার্য, যা অনেক ব্যাংক শাখায় পরিলক্ষিত হয় না। পর্যাপ্ত ক্যাশ বা সার্ভিস কাউন্টার না থাকলে টোকেন সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও প্রসেসিং সময় বেড়ে যায়, ফলে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয় এবং গ্রাহকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। অনেক শাখায় ডিজিটাল মনিটর বা ডিসপ্লে না থাকায় গ্রাহকদের টোকেন নম্বর জানতে বারবার মুখে জিজ্ঞাসা করতে হয়, যার ফলে ভীড় ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। স্টাফ স্বল্পতা বা দায়িত্বে অবহেলার কারণে টোকেন অনুযায়ী সেবা প্রদানে ঘাটতি থাকে, যা অপেক্ষমাণ গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং অনেকেই নিয়ম ভেঙে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি প্রবীণ বা কম শিক্ষিত গ্রাহকরা প্রায়ই টোকেন সিস্টেম সঠিকভাবে না বুঝে সরাসরি কাউন্টারে চলে যান, যা অন্যান্য গ্রাহকদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়। সবশেষে, টোকেন ব্যবস্থার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের অভাব, যার ফলে ব্যবস্থাটি কাঙ্ক্ষিত ফলপ্রসূ হয় না এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে।

তাহলে এর সমাধান কী হতে পারে?

এই এই সিস্টেমটাকে আরও কার্যকর করা লক্ষ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে যে উদ্যোগগুলো নিতে পারি তা নিচে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করলাম।

টোকেন ব্যবস্থাকে কার্যকর ও গ্রাহকবান্ধব করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সর্বপ্রথম, প্রতিটি শাখায় ডিজিটাল ডিসপ্লে ও অডিও কলিং সিস্টেম চালু করা উচিত, যাতে গ্রাহকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোকেন আপডেট জানতে পারেন। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত ক্যাশ ও সার্ভিস কাউন্টার নিশ্চিত করলে সেবা প্রদান দ্রুত হয় এবং লাইনের চাপ কমে আসে। স্টাফদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের দায়িত্ববোধ ও সেবার মান বাড়ানো যায়। প্রবীণ ও নতুন গ্রাহকদের সহায়তার জন্য নির্দেশনা বোর্ড স্থাপন ও সহায়ক স্টাফ নিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার হিসেবে ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে লাইভ কিউ ট্র্যাকিং সুবিধা যুক্ত করলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই তাদের সিরিয়াল ও সেবা পরিস্থিতি জানতে পারবেন, যা সামগ্রিকভাবে গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নত করবে।

সুতরাং, ব্যাংকে টোকেন সিস্টেম সুশৃঙ্খলতার জন্য কার্যকর হতে পারে, তবে তার সফলতা নির্ভর করে ব্যবস্থাপনার ওপর। প্রযুক্তি আর মানবিক আচরণের সমন্বয়েই সম্ভব গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন।

এস এম শামীম হাসান 
ব্র্যান্ড কনটেন্ট ম্যানেজার 
ব্যাংকিং আইকিউ ডট ইনফো

নবীনতর পূর্বতন