বিভিন্ন সময়ে আমরা ব্যাংকিং সেবায় সমস্যার সম্মুখীন হই—হয়তো ভুল লেনদেন, অতিরিক্ত চার্জ, সেবার ধীরগতি কিংবা মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং সংক্রান্ত জটিলতা, ব্যাংক স্টাফদের নিকট থেকে অপ্রত্যাশিত আচরণ, অনিয়ম ও জালিয়াতি ইত্যাদি।। কিন্তু সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার হলো, অভিযোগ করেও যদি ব্যাংক পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। তখন একজন গ্রাহক কী করতে পারেন?
সমস্যাটি কেমন? আগে সেটা বোঝা জরুরি
ব্যাংকিং সেবায় সমস্যার ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে। এটি হতে পারে সাধারণ পরিষেবা সংক্রান্ত, যেমন: অতিরিক্ত বা অস্বচ্ছ চার্জ কাটা, অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টে অসংগতি, কিংবা বিল পেমেন্টে বিলম্ব বা ব্যর্থতা। আবার জটিল লেনদেনজনিত সমস্যাও হতে পারে, যেমন: ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে ফেলা বা অননুমোদিত লেনদেন। এর বাইরে আরও মারাত্মক সমস্যা হলো সাইবার অপরাধ, যার মধ্যে অর্থ চুরি, ফিশিং, ভুয়া লিঙ্ক বা অ্যাপে ক্লিক করে ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক হয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এই তিন ধরনের সমস্যাই গ্রাহকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় ঝুঁকি তৈরি করে এবং প্রতিটির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
প্রাথমিক করণীয়
ব্যাংকিং সংক্রান্ত কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে কার্যকর সমাধান পেতে হলে প্রথমেই বিষয়টি লিখিতভাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো জরুরি। শুধুমাত্র ফোন কল বা মৌখিক অভিযোগে না থেকে, ইমেইলের মাধ্যমে অথবা নির্ধারিত অভিযোগ ফর্ম পূরণ করে অভিযোগ দাখিল করতে হবে এবং সেই অভিযোগের acknowledgment বা ট্র্যাকিং নম্বর সংরক্ষণ করা উচিত। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে সাধারণত ৭ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সেবার সমাধান প্রদান করতে হয়—এই সময়সীমাটি গ্রাহকের অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও যদি কোনো সমাধান না পাওয়া যায়, তাহলে আবারও সংশ্লিষ্ট কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে ফলোআপ করা প্রয়োজন, যাতে অভিযোগটি উপযুক্ত পর্যায়ে পৌঁছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
ব্যাংক ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী ধাপ কী?
যদি ব্যাংক আপনার অভিযোগের যথাযথ সমাধান না দেয় বা প্রতিক্রিয়া না জানায়, তাহলে আপনাকে পরবর্তী পর্যায়ে আরও কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, শাখা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না থেকে ব্যাংকের হেড অফিসে লিখিতভাবে অভিযোগ পাঠান—বিশেষত গ্রিভেন্স রেড্রেসেল অফিসার বা হেড অব কাস্টমার সার্ভিস বরাবর। ইমেইলের পাশাপাশি ডাকযোগেও পাঠানো যেতে পারে। তাতেও যদি কোনো ফল না আসে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং অপরাধ এবং অভিযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’-এ লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি অনলাইন কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে, যেখানে আপনি সহজেই অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। অভিযোগ করতে ।
শুধুমাত্র এখানে ক্লিক করুন, এবং প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন অভিযোগ নম্বর, প্রমাণপত্র, ব্যাংকের নাম ও শাখা, এবং আপনার যোগাযোগের তথ্য সঠিকভাবে যুক্ত করুন। এছাড়া, পরিষেবা সংশ্লিষ্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরেও (DNCRP) লিখিত অভিযোগ করা যেতে পারে।
একটি অভিযোগকে কার্যকর করতে হলে সেটিকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ব্যাংকের সঙ্গে করা প্রতিটি যোগাযোগ—বিশেষ করে কাস্টমার সার্ভিসে ফোনালাপের রেকর্ড, ইমেইল বা চ্যাটের স্ক্রিনশট, এবং সংশ্লিষ্ট লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করুন। অভিযোগে অবশ্যই যথাযথ প্রমাণপত্র যেমন ট্রানজেকশন রেফারেন্স, স্টেটমেন্ট ও স্ক্রিনশট যুক্ত করুন। ভাষা ব্যবহার হবে প্রফেশনাল, সংক্ষিপ্ত ও নিরপেক্ষ—এতে করে অভিযোগ গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমস্যাটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে বাধ্য হয়।
সুতরাং, ব্যাংকিং খাতে গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আপনাকেও সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। মনে রাখবেন, অভিযোগ করেই থেমে গেলে হবে না, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আপনার অধিকার আদায় করে নিতে হবে।