সাধারণত প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনেকেই তাদের মুঠোফোনে একটি ক্ষুদেবার্তা দেখতে পান এখন থেকে এক্সাইজ ডিউটি বাবদ একটি চার্জ কর্তন করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা প্রথমবার এটি দেখেন, তাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বোধ করেন অথবা বিভ্রান্তিতে থাকেন। আজকের এই আলোচনা পুরো টপিক জোড়ে আমরা জানার চেষ্টা করব এক্সাইজ ডিউটি অথবা আবগরি শুল্ক আসলে কি?
অনেক গ্রাহক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা কর্তনের সময় “এক্সাইজ ডিউটি” দেখে মনে করেন এটি কোনো ব্যাংক সার্ভিস চার্জ। অথচ বাস্তবে এটি একেবারেই ভিন্ন একটি বিষয়। এক্সাইজ ডিউটি হলো সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি বাৎসরিক কর, আমরা এটিকে পরোক্ষ কর ও বলতে পারি। যা ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সের ওপর নির্ধারিত হারে কর্তন করা হয়। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এর নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত এবং পরিচালিত হয়।
এক্সাইজ ডিউটি ব্যাংক চার্জ নয় কেন?
ব্যাংক সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস চার্জ আরোপ করে তাদের প্রদানকৃত সেবার বিনিময়ে। তবে এক্সাইজ ডিউটি এসব চার্জের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আদায়ের একটি মাধ্যম, যা ব্যাংক কেবলমাত্র সরকার পক্ষ থেকে গ্রাহকের একাউন্ট থেকে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সময়ে সরকারের কোষাগারে জমা দেয়।
কোন কোন একাউন্টে এক্সাইজ ডিউটি কাটা হয়?
বাংলাদেশে পরিচালিত সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক আইনত ভাবে প্রতিটি গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে এক্সাইজ ডিউটি কর্তন করতে বাধ্য। এটি প্রযোজ্য হয় নিচের অ্যাকাউন্টগুলোর ক্ষেত্রে:
- সঞ্চয়ী হিসাব (Savings Account)
- চলতি হিসাব (Current Account)
- ঋণ হিসাব (Loan Account)
- ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্ট (Credit Card)
- অন্যান্য ডিপোজিট/ট্রানজ্যাকশন ভিত্তিক হিসাব
কখন ও কীভাবে এক্সাইজ ডিউটি কাটা হয়?
এই ডিউটি বা শুল্ক সাধারণত প্রতি অর্থবছরের শেষে, অর্থাৎ ডিসেম্বর ক্লোজিং শেষে কর্তন করা হয়। এটি কেবল তখনই প্রযোজ্য হয়, যখন সারা বছরের যেকোনো সময়ে আপনার অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ ব্যালেন্স নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময় আপনার একাউন্টে সর্বোচ্চ ব্যালেন্স ছিল ১ লাখ ৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবে এক্সাইজ ডিউটি হিসেবে ১৫০ টাকা কাটা হবে। (চলমান হার অনুযায়ী)
এক্সাইজ ডিউটির হার (Excise Duty Slab)
সরকারি প্রজ্ঞাপন (এস.আর.ও.নং-১৪৩-আইন/২০২০/১০৪-আবগারি, তারিখঃ ১১ জুন ২০২০) অনুযায়ী, ১ জুলাই ২০২০ থেকে নিচের হারে এক্সাইজ ডিউটি কার্যকর হয়েছে:
বাৎসরিক সর্বোচ্চ ব্যালেন্স প্রযোজ্য এক্সাইজ ডিউটি
১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ০ টাকা
১,০০,০০১ – ৫,০০,০০০ টাকা ১৫০ টাকা
৫,০০,০০১ – ১০,০০,০০০ টাকা ৫০০ টাকা
১০,০০,০০১ – ১,০০,০০,০০০ টাকা ৩,০০০ টাকা
১,০০,০০,০০১ – ৫,০০,০০,০০০ টাকা ১৫,০০০ টাকা
৫,০০,০০,০০১ টাকার উপরে ৪০,০০০ টাকা
কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক
- একাধিক একাউন্ট থাকলে প্রত্যেকটির উপর পৃথকভাবে এক্সাইজ ডিউটি প্রযোজ্য হতে পারে।
- যেসব অ্যাকাউন্টে সারা বছরে ১ লাখ টাকার নিচে ব্যালেন্স ছিল, সেখানে কোনো ডিউটি প্রযোজ্য নয়।
- ব্যাংক কর্তৃক এই কর্তন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অটোমেটেড পদ্ধতিতে হয়।
- এক্সাইজ ডিউটি মওকুফ যোগ্য নয়
সুতরাং, এক্সাইজ ডিউটি একটি বাধ্যতামূলক রাষ্ট্রীয় কর, যা ব্যাংকে থাকা ব্যালেন্সের ভিত্তিতে নির্ধারিত হারে কর্তন করা হয়। এটি কোনোভাবেই ব্যাংকের নিজস্ব চার্জ নয়, বরং সরকারের অর্থনৈতিক কাঠামোর অংশ হিসেবে গণ্য হয়। তাই গ্রাহকদের উচিত বিষয়টি সঠিকভাবে জেনে ব্যাংক স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণ করা, যাতে অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি এড়ানো যায়।