সিআইবি রিপোর্ট নেগেটিভ হলে করণীয় | What to Do if You Have a Negative CIB Report

সিআইবি রিপোর্ট নেগেটিভ হলে করণীয় | What to Do if You Have a Negative CIB Report


সিআইবি বা ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, যা প্রতিটি ঋণগ্রহীতা বা ক্রেডিট কার্ডধারীর আর্থিক লেনদেনের ইতিহাস সংরক্ষণ করে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বা কার্ডের জন্য আবেদন করার সময় এই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিআইবি সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। আপনি যদি সেটি না পড়ে থাকেন অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন......

একজন গ্রাহকের সিআইবি রিপোর্টে যদি নেতিবাচক (Negative) তথ্য থাকে, তাহলে নতুন ঋণ বা কার্ড পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এ অবস্থায় করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা করব এই কনটেন্টে।

কীভাবে সিআইবি রিপোর্ট নেগেটিভ হয়?

একজন গ্রাহকের সিআইবি রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার পেছনে মূলত নিম্নোক্ত কারণগুলো থাকে:

  • সময়মতো ঋণ কিস্তি পরিশোধ না করা
  • ক্রেডিট কার্ড বিলের ডিউ তারিখ অতিক্রম করা
  • চেক বাউন্স বা লোন ক্লোজ না করা
  • একাধিক বার ঋণ পুনঃতফসিল করা
  • ঋণ অবলোপনের পরও খেলাপির ইতিহাস থাকা

এই তথ্যগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি মাসে সিআইবিতে পাঠায়, যা রিপোর্টে যুক্ত হয়। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাও বটে।

সিআইবি রিপোর্ট নেগেটিভ হলে আপনি যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন

  • নতুন ব্যাংক ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড আবেদন বাতিল হতে পারে
  • হাইভ্যালু প্রপার্টি লোন বা বিজনেস লোন পাওয়া কঠিন হয়
  • ফিনান্সিয়াল স্কোর কমে যায়
  • আইপিও/রাইট শেয়ারে অংশগ্রহণে বাধা হতে পারে (যদি আপনি কোম্পানির পরিচালক হন)

সিআইবি রিপোর্ট নেগেটিভ হলে করণীয়

আপনার রিপোর্টটি যাচাই করুন

প্রথম ধাপ হলো নিজের সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহ করা। আপনি নিজে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে রিপোর্ট দেখতে পারেন। এজন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  • ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র (যদি প্রয়োজন হয়)
  • আবেদনপত্র পূরণ

ভুল বা পুরনো তথ্য থাকলে আপত্তি জানান

কখনো কখনো সিআইবি রিপোর্টে পুরনো বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ঋণ ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধ ও বন্ধ (closed) হয়ে গেলেও রিপোর্টে সেটি এখনো সক্রিয় (active) হিসেবে দেখাতে পারে। এ ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়ে তথ্য সংশোধনের অনুরোধ করা উচিত। প্রয়োজনে, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)’ সংগ্রহ করে তা সিআইবি আপডেটের জন্য দাখিল করা যেতে পারে।

বকেয়া পরিশোধ করুন এবং নিষ্পত্তির প্রমাণ রাখুন

যদি আপনি সত্যিকার অর্থে ডিফল্টার হন, তাহলে বকেয়া ঋণ বা বিল যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করুন। পেমেন্টের পর ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে "No Objection Certificate (NOC)" বা পেমেন্ট স্লিপ সংগ্রহ করুন এবং প্রমাণপত্র হিসেবে রাখুন।

ব্যাংক থেকে সিআইবি আপডেট নিশ্চিত করুন

পরিশোধের পর ব্যাংক যেন বাংলাদেশ ব্যাংকে আপনার ক্লিয়ারেন্স তথ্য রিপোর্ট করে—এটা নিশ্চিত করুন। এটি সাধারণত ৩০ দিনের মধ্যে আপডেট হওয়ার কথা, তবে প্রয়োজনে আবার অনুসরণ করুন।

পরবর্তী লোন/কার্ড আবেদন করার আগে বিরতি দিন

সিআইবি রিপোর্ট আপডেট ও পজিটিভ রেকর্ড তৈরির জন্য ৩–৬ মাস সময় দিন। এই সময়ে আপনি কোনো নতুন খেলাপি এন্ট্রি না করে আর্থিক আচরণে সতর্ক থাকুন।

  • ক্রেডিট প্রোফাইল ম্যানেজমেন্ট শুরু করুন
  • একটি ছোট লোন নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করুন

  • অটোমেটিক পেমেন্ট চালু করুন
  • মাসিক ব্যালেন্স ও কার্ড লিমিটের মধ্যে লেনদেন করুন

এগুলো ধীরে ধীরে আপনার রিপোর্টকে শক্তিশালী ও পজিটিভ করতে সাহায্য করবে।

সুতরাং, সিআইবি রিপোর্ট নেগেটিভ হলে চিন্তিত না হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আর্থিক দায়িত্বশীলতা এবং নিয়মিত পরিশোধের মাধ্যমে রিপোর্ট ধীরে ধীরে পজিটিভ করা সম্ভব। সঠিক পদক্ষেপ, সময়োচিত সিদ্ধান্ত এবং সচেতনতা থাকলে ভবিষ্যতে আপনি আবারও ব্যাংকিং সুবিধা ও ক্রেডিট কার্ডের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারেন।

এসএম শামীম হাসান 
ব্র্যান্ড কনটেন্ট ম্যানেজার 
ব্যাংকিং আইকিউ ডট ইনফো 

নবীনতর পূর্বতন