ক্ষুদ্র লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ | Unregulated Agent Behavior in MFS

ক্ষুদ্র লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ | Unregulated Agent Behavior in MFS


বাংলাদেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) গুলো যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট, ইত্যাদি দেশের আর্থিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম ও নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং ও লেনদেনকে সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ করার সুযোগ প্রদান করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো ৫০ টাকা থেকে ক্যাশ আউট এবং ক্যাশ ইন করার সুযোগ শুরু করলেও, অধিকাংশ এজেন্ট ৫০০ টাকার নিচের বা অতি ক্ষুদ্র লেনদেন করতে রাজি নন বা অতিরিক্ত চার্জ নিচ্ছেন। বিশেষ করে বিকাশ, যেহেতু দেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, সেখানে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মোবাইল ব্যাংকিং এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মূল লক্ষ্য হলো সকল শ্রেণির মানুষের জন্য আর্থিক লেনদেনকে সহজ ও সাশ্রয়ী করা। তাই ছোট অংকের লেনদেনগুলোতে এই ধরনের বাধা ও অতিরিক্ত খরচের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।

দেশে বড় অঙ্কের লেনদেনের জন্য প্রচুর ব্যাংক রয়েছে এবং সাধারণত এই ধরনের লেনদেন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যথেষ্ট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। তবে আমাদের সমাজে অনেক স্টুডেন্ট এবং সাধারণ মানুষ আছেন, যাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট অঙ্কের লেনদেনগুলো জরুরি ও প্রয়োজনীয়। তাদের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং একটি প্রয়োজনীয় সেবা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে মোবাইল ব্যাংকিং, বিশেষ করে বিভিন্ন এজেন্টরা, অনেক সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মত কঠোর অডিট বা নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন। এর ফলে ছোট লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা ও অতিরিক্ত খরচের সৃষ্টি হয়, যা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য প্রকৃত অর্থে অসুবিধাজনক।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়

এই সমস্যার স্থায়ী ও কার্যকর সমাধানে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের—বিশেষ করে যারা মাঠপর্যায়ে এজেন্ট নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন—তাদেরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ, ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মূল মুখ আজ এজেন্টরাই, যারা গ্রাহকের সরাসরি সেবাদানকারী। তাই তাদের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করাই এখন সময়ের দাবি।

এজেন্টদের কার্যক্রম রেগুলেটরি কাঠামোর আওতায় আনা

নির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে এজেন্টদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে তারা নিজের খেয়ালখুশি মত চার্জ বসানো, ছোট অঙ্কের লেনদেন অস্বীকার বা বিকল্প পার্সোনাল নম্বরে লেনদেনের প্রস্তাব না দিতে পারে।

 নিয়মিত ও কৌশলগত অডিট চালু করা

এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে নিয়মিত অডিট ও পরিদর্শন চালু করতে হবে। প্রয়োজনে গোপন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনিয়ম চিহ্নিত করা যেতে পারে।

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ

নীতিমালা লঙ্ঘন বা গ্রাহকের সঙ্গে অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এজেন্টের সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা, লাইসেন্স বাতিল, অথবা জরিমানার মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

এজেন্ট রেটিং সিস্টেম চালু করা

প্রতিটি লেনদেনের পর গ্রাহক যেন অ্যাপ থেকেই এজেন্টের আচরণ, অতিরিক্ত চার্জ করেছেন কি না, বিকল্প পার্সোনাল নম্বরে লেনদেন করতে বলেছেন কি না—এসব বিষয়ে ফিডব্যাক দিতে পারেন, এমন একটি রেটিং সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে এ রেটিং অনুযায়ী এজেন্টের মূল্যায়ন, প্রণোদনা বা ডাউনগ্রেডিং করা সম্ভব হবে।

গ্রাহক সচেতনতা বাড়ানো

গ্রাহকদের জানাতে হবে—কোন লেনদেনে কত চার্জ প্রযোজ্য, কী কী আচরণ এজেন্টদের ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য, এবং কোন সমস্যায় কোথায় অভিযোগ করতে হবে। এটি অ্যাপ, এসএমএস, ওয়েবসাইট এবং গণমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে করা যেতে পারে।

ডিজিটাল কাস্টমার সাপোর্ট ও সরাসরি অভিযোগ গ্রহণ ব্যবস্থা

অ্যাপের মধ্যেই "Report Agent Misconduct" বা "অভিযোগ জানান" ফিচার থাকতে হবে, যাতে গ্রাহক তাৎক্ষণিকভাবে বিকাশ/নগদ-এর কাছে এজেন্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিতে পারেন।

পরিশেষে বলতে চাই, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস যদি সত্যিকার অর্থে সবার জন্য হয়, তবে এই সেবাকে স্বচ্ছ, নিয়ন্ত্রিত এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই হবে। অন্যথায়, ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির স্বপ্ন বাস্তবে পূর্ণতা পাবে না। এবং এটা তখন শুধুমাত্র বড় অঙ্কের বা প্রভাবশালী গ্রাহকদের জন্যই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে, যা সার্বজনীন সেবার মূল দর্শনের পরিপন্থী।


এস এম শামীম হাসান 
ব্র‍্যান্ড এম্বাসেডর
ব্যাংকিং আইকিউ ডট ইনফো 

নবীনতর পূর্বতন