সুইফট কি এবং কিভাবে কাজ করে? | What is SWIFT and How Does It Work?

সুইফট কি এবং কিভাবে কাজ করে? | What is SWIFT and How Does It Work?


আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং এবং অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সুইফট একটি অপরিহার্য মাধ্যম। বর্তমান বিশ্বায়িত অর্থনীতিতে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে টাকা স্থানান্তর বা আর্থিক বার্তা আদান-প্রদানে সুইফট নেটওয়ার্কের ভূমিকা অপরিসীম। তাই এই প্রবন্ধে আমরা সুইফট কী, এর ইতিহাস, কাজ করার পদ্ধতি, সদর দপ্তর এবং প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সব তথ্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

সুইফট কি?

SWIFT (Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication) হলো একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক বার্তা প্রেরণ ব্যবস্থা, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপদ ও দ্রুত আর্থিক বার্তা বিনিময়ের সুযোগ দেয়। সহজ কথায়, এটি একটি ডিজিটাল কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম যা ব্যাংকগুলোকে একে অপরের সাথে টাকা পাঠানো, আদায়, স্টেটমেন্ট শেয়ার করা এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্য আদান-প্রদান করতে সাহায্য করে। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সুইফট একটি অপরিহার্য অবকাঠামো। এটি ব্যতীত দেশের বাইরে টাকা স্থানান্তর প্রায় অসম্ভব। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের বিশ্বস্ততা এবং স্বচ্ছতার জন্য সুইফট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সুইফট এর ইতিহাস

১৯৭৩ সালে, তখনকার সময়ের বৃহৎ ২৩টি আন্তর্জাতিক ব্যাংক মিলিত হয়ে সুইফট প্রতিষ্ঠা করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী আর্থিক লেনদেনের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য, দ্রুত ও সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা। এর পূর্বে ব্যাংকগুলো টেলিগ্রাফ ও ফোনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করত, যা ধীর, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল ছিল। সুইফট এর আত্মপ্রকাশ সেই সময় থেকে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ধরণ সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। সুইফট এর সদর দপ্তর অবস্থিত বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে এর অনেক শাখা ও অফিস রয়েছে যা বিভিন্ন অঞ্চলে সেবা প্রদান করে থাকে।

সুইফট এর কর্মপদ্ধতি ও কিভাবে কাজ করে?

সুইফট একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে যেখানে সদস্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের আর্থিক বার্তাগুলো আদান-প্রদান করে। সুইফট নিজে কোনো টাকা স্থানান্তর করে না, বরং এটি একটি নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

সুইফটের কর্মপ্রক্রিয়া সংক্ষেপে:

যখন একজন ব্যাংকের গ্রাহক অন্য দেশের ব্যাংকে টাকা পাঠাতে চান, তখন প্রথম ব্যাংক সুইফট মেসেজ তৈরি করে। এই মেসেজে থাকে প্রেরক এবং প্রাপক ব্যাংকের বিস্তারিত তথ্য, লেনদেনের পরিমাণ, কারেন্সি, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। মেসেজটি সুইফট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অত্যন্ত নিরাপদভাবে গন্তব্য ব্যাংকে পাঠানো হয় এবং গন্তব্য ব্যাংক মেসেজ পেয়ে লেনদেন সম্পন্ন করে এবং প্রাপক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই পুরো প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় এবং প্রায়ই কয়েক মিনিট থেকে একদিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

সুইফট এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

সুইফট বার্তা প্রেরণে অত্যাধুনিক এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, ফলে তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে অর্থ স্থানান্তর দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা যায়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ২০০টিরও বেশি দেশের প্রায় ১১,০০০ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুইফট এর মাধ্যমে যুক্ত। সুইফট বার্তা আদান-প্রদানে নির্দিষ্ট ফরম্যাট মেনে চলতে হয়, যা লেনদেনকে স্বয়ংক্রিয় এবং সহজ করে তোলে।

SWIFT কোড (BIC) কি?

সুইফট কোড, যা BIC (Bank Identifier Code) নামেও পরিচিত, একটি আন্তর্জাতিক মানের কোড যা বিশ্বের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিরাপদ ও নির্ভুলভাবে আর্থিক লেনদেন পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি সুইফট কোড সাধারণত ৮ বা ১১ অক্ষরের হয়ে থাকে এবং এটি চারটি অংশে বিভক্ত: প্রথম চার অক্ষর ব্যাংকের কোড বোঝায় (Bank Code), পরবর্তী দুটি অক্ষর দেশের কোড (Country Code), এরপরের দুটি অক্ষর অবস্থান বা শহরের কোড (Location Code), এবং শেষ তিনটি অক্ষর, যদি থাকে, তা নির্দিষ্ট শাখা নির্দেশ করে (Branch Code)। উদাহরণস্বরূপ, "SCBLBDDHXXX" কোডে ‘SCBL’ হলো ব্যাংক কোড (Standard Chartered Bank), ‘BD’ হলো বাংলাদেশের দেশ কোড, ‘DH’ হলো ঢাকা শহরের অবস্থান কোড, এবং ‘XXX’ বোঝায় যে এটি মূল শাখা। এই গঠন কাঠামোর মাধ্যমে সুইফট কোড একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখাকে বিশ্বব্যাপী সনাক্ত করতে সক্ষম করে, যা আন্তর্জাতিক অর্থ প্রেরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সুতরাং, সুইফট হল আধুনিক বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং ব্যবস্থার রক্তসঞ্চার মাধ্যম। এর সুরক্ষিত, দ্রুত এবং নির্ভুল কর্মপদ্ধতি আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনকে সহজতর করেছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশে ব্যাংকগুলো সুইফট ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে, যা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্প্রীতি ও ব্যবসার অগ্রগতির অন্যতম মূল চালিকা শক্তি।



নবীনতর পূর্বতন