ইসলামিক ব্যাংকিং কী? | What is Islamic Banking?

ইসলামিক ব্যাংকিং কী? | What is Islamic Banking?


ইসলামিক ব্যাংকিং বা ইসলামী ব্যাংকিং হলো এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা, যা ইসলামী শরীয়াহ আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এটি প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমের বিকল্প, যেখানে ইন্টারেস্ট গ্রহণ ও প্রদান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবসা-ভিত্তিক এবং ঝুঁকি ভাগাভাগির নীতির উপর ভিত্তি করে চলে। 

ইসলামে সুদ ভিত্তিক লেনদেন হারাম বা নিষিদ্ধ, পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, “যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির মতো উঠে দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ করে উন্মাদ বানিয়ে দিয়েছে” (সূরা আল-বাকারা, ২:২৭৫)। এই আয়াতে সুদভিত্তিক লেনদেনকারীদেরকে বিকৃত অবস্থায় কিয়ামতে ওঠানোর কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, “আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন” (সূরা আল-বাকারা, ২:২৭৬)। পরবর্তীতে আল্লাহ হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং যদি তোমরা সত্যিকার মুমিন হও, তবে যা কিছু সুদের বাকী আছে তা ছেড়ে দাও” (সূরা আল-বাকারা, ২:২৭৮)। এবং আরও স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, “যদি তোমরা তা না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে রাখো” (সূরা আল-বাকারা, ২:২৭৯)। এসব আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, সুদ -ভিত্তিক অর্থনীতি কুরআনের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ, যা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।

ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মূলনীতি:

ইসলামিক ব্যাংকিং একটি ন্যায়ভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থা যা সম্পূর্ণরূপে ইন্টারেস্টমুক্ত (রিবা থেকে মুক্ত) লেনদেনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এতে কোনো প্রকার ইন্টারেস্ট গ্রহণ বা প্রদান করা হয় না; বরং ব্যাংক ও গ্রাহক বিনিয়োগ বা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মুনাফা অর্জন করে। এ ব্যবস্থার সব কার্যক্রম ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং হারাম খাত যেমন অ্যালকোহল, জুয়া, অস্ত্র বা অনৈতিক ব্যবসায় অর্থায়ন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ঝুঁকি ভাগাভাগি, যেখানে ব্যাংক ও গ্রাহক মুদারাবা বা মুশারাকা চুক্তির মাধ্যমে যৌথভাবে ঝুঁকি ও মুনাফা বহন করে। এ ব্যবস্থায় লেনদেন আসল সম্পদ বা বাস্তব সেবা ভিত্তিক হওয়ায় এটি কৃত্রিম আর্থিক ব্যবস্থার বিপরীতে অবস্থান করে। সর্বোপরি, নৈতিকতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পরিচালিত এই ব্যাংকিং পদ্ধতি গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে একটি সৎ ও টেকসই আর্থিক পরিবেশ গড়ে তোলে।

ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে প্রচলিত কিছু চুক্তি:

  • মুরাবাহা: পণ্য ক্রয় করে নির্ধারিত মুনাফায় বিক্রি করা।
  • ইজারা: ভাড়া ভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থা।
  • মুশারাকা: অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ।
  • মুদারাবা: ব্যাংক ও উদ্যোক্তার যৌথ উদ্যোগে মুনাফা ভাগাভাগি।

ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সুবিধাসমূহ:

  • শারিয়াহ আইনের বিধান মেনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম।
  • সুদ থেকে মুক্ত নিরাপদ আর্থিক লেনদেন।
  • ন্যায্য মুনাফা ও ঝুঁকি ভাগাভাগির নীতি।
  • সামাজিক কল্যাণমুখী ও নৈতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

সুতরা, এক কথায় ইসলামিক ব্যাংকিং হবে একটি কল্যাণমুখী। অনেকের ধারণা যে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য, এটি একেবারেই ভুল। ইসলামিক ব্যাংকিং তো ব্যাংকিং কেবল একটা সিস্টেম মাত্র। যার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার সর্বোত্তম কিছু নীতি রয়েছে যা সবার জন্য কল্যাণকর। 

ইসলামিক ব্যাংকিং শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় ভিত্তিক ব্যাংকিং পদ্ধতি নয়; এটি একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং নৈতিক আর্থিক ব্যবস্থা। যারা শরীয়াহ অনুসারে আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত পছন্দ।


এস এম শামীম হাসান 
ব্র্যান্ড কনটেন্ট ম্যানেজার 
ব্যাংকিং আইকিউ ডট ইনফো


নবীনতর পূর্বতন